উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় জেনে নিন

আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলে অবশ্যই উদ্যোক্তা হতে হবে। কিন্তু পুঁজির অভাবে প্রায় অধিকাংশ মানুষ উদ্যোক্তা হতে পারেন না। তাই আপনাদের জানার সুবিধার্থে উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় সে সম্পর্কে এই পোস্টের মাধ্যমে নিচে জানানোর চেষ্টা করবো।
উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় এবং কোন কোন খাত থেকে লোন পাওয়া যায়, আপনারা এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আশা করি জেনে নিতে পারবেন।

পোস্ট সূচীপত্রঃ উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় জানতে পড়ুন

উদ্যোক্তা ঋণ কি জেনে নিন

বাংলাদেশের বর্তমানে প্রায় ১০০% এর ভিতরে ৫০% মানুষ বেকার অবস্থায় থাকে। আর এজন্য বাংলাদেশের প্রায় অনেকগুলো ব্যাংক রয়েছে যেগুলো এরকম বেকার সমস্যার সমাধানের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে থাকে আর এটিকেই উদ্দ্যোক্তা ঋণ বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে অনেকগুলো ব্যাংক উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ঋণ প্রদান করে থাকে সেগুলোর মধ্যে হচ্ছে

  • গ্রামীণ ব্যাংক
  • সোনালী ব্যাংক
  • রূপালী ব্যাংক
  • ইসলামী ব্যাংক
  • পূবালী ব্যাংক ইত্যাদি
আপনারা চাইলে উপরে উল্লেখিত ব্যাংকগুলো থেকে গ্রহণ করে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।

উদ্যোক্তা লোনের খাতসমূহ

উদ্যোক্তা লোন কোন কোন খাতসমূহ থেকে নিতে পারবেন সেই সম্পর্কে প্রায়ই অধিকাংশ মানুষ ধারণা রাখেন না। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে খুব সহজেই জেনে নিতে পারবেন।

  • উৎপাদনশীল খাত থেকে লোন নিতে পারবেন।
  • প্রাণী সম্পদ খাত থেকে লোন নিতে পারবেন।
  • শিল্পকারখানা খাত থেকে লোন নিতে পারবেন।
  • ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতে লোন নিতে পারবেন।
  • কৃষিজ উৎপাদন খাতে লোন নিতে পারবেন
  • নার্সারি খাতে লোন নিতে পারবেন।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণের জন্য কি কি ডকুমেন্ট লাগে?

ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনারা প্রয়োজনে কিছু ডকুমেন্ট লাগবে। সেগুলো আপনাদের জানার সুবিধার্থে থেকে নিচে উল্লেখ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

  • হলফনামা স্ট্যাম্প
  • জামানত নামা স্ট্যাম্প
  • বন্ধকীকরণ চুক্তিনামা
  • ঋণগ্রহণপত্র
  • লোন পরিষদের ক্ষমতা প্রদান পত্র
  • সম্মতি পত্র
  • কিস্তি পত্র
  • চাহিদা প্রতিজ্ঞাপত্র ও প্রতিশ্রুতি
  • স্বত্বাধিকার দলিল পত্র
  • ঋণ অনুমোদনের শর্তাবলী গুলো
  • বন্ধকি দলিল
  • জাতীয় পরিচয় পত্র
  • ট্রেড লাইসেন্স ইত্যাদি

উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় জানুন

আপনারা বেকার অবস্থায় রয়েছেন সেক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হতে চাচ্ছেন, কিন্তু কিভাবে উদ্যোক্তা লোন পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানেন না। তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে পড়তে পারেন। বাংলাদেশের অসংখ্য ভাই ও বোনেরা রয়েছেন যারা মেধা থাকার ফলেও পর্যাপ্ত মূলধনের অভাবে দিনের 

পর দিন বেকার বসে থাকতে হয়। এসব বেকারদের কথা চিন্তা করে প্রায় কয়েকটি ব্যাংক ব্যবসা করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে লোন দিয়ে থাকে যেন তারা ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়ে সঠিক সময়ে লোন পরিশোধ করতে পারেন। কিন্তু ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের কিছু নিয়মকানুন রয়েছে যেগুলো অবশ্যই আপনাদের মানতে হবে সেগুলো নিচে জেনে নিতে পারেন।

উদ্যোক্তা লোন আবেদনের প্রক্রিয়া জেনে নিন

আপনারা যারা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন সেক্ষেত্রে আপনার পছন্দের ব্যাংক হতে ফরম সংগ্রহ করতে পারেন।একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনে কাগজপত্রসহ আবেদন পত্র গুলো জমা দিতে হবে। তবে বিভিন্ন ব্যাংকের কাগজপত্র চাহিদা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এছাড়াও নিয়মের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়।

  • উদ্যোক্তা লোন গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
  • লোন গ্রহণকারীর অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র থাকতে হবে।
  • ব্যাংক কর্তৃক ফর্মে অবশ্যই এই একাউন্ট করার দরখাস্ত থাকতে হবে।
  • পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি লাগবে
  • ট্রেড লাইসেন্সের সত্যায়িত কপি প্রয়োজন পড়বে।
  • ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য কে কে ব্যাংক একাউন্ট অপারেট করবেন তার নাম দিতে হবে।
  • সার্টিফাইড join stock থেকে কার্যারম্ভের অনুমতি পত্র প্রয়োজন পড়বে।
  • মেম্বার কিংবা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সমিতির সদস্য সার্টিফিকেট লাগবে।
  • যে ব্যক্তি লোন গ্রহণ করবে তাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
  • ব্যাংকের অন্য কোন অ্যাকাউন্ট হোল্ডার কর্তৃক আপনার ছবি ও আবেদনপত্র স্বাক্ষরের প্রয়োজন পড়বে।
  • আপনার বাসার ট্যাক্স বিল কিংবা ইলেকট্রিকের বিলের কপি লাগবে।
  • আপনি কি কাজ করতে চাচ্ছেন তার কাগজপত্র লাগবে।
  • সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি হচ্ছে আপনি কি কাজের উদ্দেশ্যে লোন নিচ্ছেন তার জন্য সম্পত্তির অংশ দেখাতে হবে। হতে পারে সেটা দলিল।
  • ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার পূর্বে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাজলা থেকে নাগরিকের সনদপত্র সংগ্রহ করতে হবে।

কোন কোন ব্যাংক থেকে উদ্যোক্তা লোন নিতে পারবেন?

বাংলাদেশের কোন কোন ব্যাংক থেকে উদ্দ্যোক্তা লোন গ্রহণ করতে পারবেন যেগুলো সম্পর্কে যারা জানেন না আশা করি নিচে জেনে নিতে পারবেন।

  • সোনালী ব্যাংক লিমিটেড
  • জনতা ব্যাংক লিমিটেড
  • পূবালী ব্যাংক লিমিটেড
  • অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড
  • বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক লিমিটেড
  • ব্র্যাক ব্যাংক
  • বেসিক ব্যাংক
  • ঢাকা ব্যাংক লিঃ
  • ইস্টার্ন ব্যাংক লিঃ
  • প্রাইম ব্যাংক লিঃ
  • এবি ব্যাংক
  • ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
  • প্রিমিয়ার ব্যাংক
  • মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক
  • সিটি ব্যাংক লিমিটেড
  • ব্যাংক এশিয়া
  • স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক

যেভাবে নারী উদ্যোক্তারা লোন পাবেন

বর্তমান সময়ের পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এগিয়ে যেতে চায় সেক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হতে পুঁজির অভাব থাকায় তেমন এগিয়ে যেতে পারে না যার ফলে পিছিয়ে থাকতে হয়। আর সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সহ আরো অন্যান্য ব্যাংকগুলো নারীর উদ্যোক্তাদের জন্য লোন দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে যাতে তারা নিজেরাই কিছু একটা করতে পারেন। কিন্তু কিভাবে লোন পাবেন সে সম্পর্কে ধারণা রাখেন না। তাই ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু উপায়ে সম্পর্কে নিচে জেনে নিতে পারেন।

  • ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কাছ থেকে একটি আবেদন ফরম সংগ্রহ করে সেটি সঠিকভাবে পূরণ করে জমা দিতে হবে।
  • জাতীয় পরিচয় পত্র কপি লাগবে
  • সাম্প্রতিক তোলা রঙ্গিন ছবি লাগবে
  • ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স এবং ভ্যাট সার্টিফিকেট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া লাগবে।
  • আপনারা যদি এমটিভি ভাগ্যবতী লোন নিতে চান সেক্ষেত্রে অবশ্যই এক বছর ব্যবসা করে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন পড়বে।

ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন

ইসলামী ব্যাংক চাকরিজীবীদের পাশাপাশি ছোট এবং মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ সুবিধা প্রদান করে থাকেন। ব্যবসাকে বড় করা এবং নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক কাজ করে থাকে। ইসলামি ব্যাংক থেকে উদ্যোক্তাদের লোন গ্রহণের ক্ষেত্রে যে কাগজপত্র গুলো প্রয়োজন পড়বে সেগুলো নিচে উল্লেখ করে দেওয়া হচ্ছে।

  • জাতীয় পরিচয় পত্র কপি
  • ইনকাম সোর্স ডকুমেন্ট প্রয়োজন পড়বে
  • উদ্যোক্তারা সাম্প্রতিক তোলা ছবি
  • ট্রেড লাইসেন্সের কপি
  • পরিকল্পনামাফিক ব্যবসার সম্ভাব্য টাকা পরিমাণের প্রয়োজন পড়বে।

প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা লোন

বাংলাদেশের যুবক এবং তরুণ সমাজকে উদ্যোক্তা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা লোন স্কিম চালু করেছেন। এই স্কিমের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ। এই স্কিমের ফলে মেধাবি বেকার তরুণরা নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা লোনের আওতায় যুবক এবং তরুণরা এককালীন সর্বোচ্চ পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পেতে পারেন 

তবে সেটা অবশ্য নির্ভর করবে ব্যবসা ধরনের উপরে। এই ঋণের সুদের হার শতকরা ৯% যা খুবই সহায়ক এবং কার্যকরী একটি মাধ্যম হতে পারে। যোগ্যতা হিসেবে আপনাকে প্রতিষ্ঠান চালানোর উপরে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকতে হবে এবং নিজের দ্বারা পরিচালিত হতে হবে এমন প্রতিষ্ঠান। চলুন প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা লোন গ্রহণেন ক্ষেত্রে যেসব যোগ্যতা গুলো লাগে সেগুলো নিচে জেনে নেওয়া যাক।

  • অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে
  • স্থায়ী বাসিন্দা স্থানীয় শাখা থেকে লোন গ্রহণ করতে পারবেন।
  • যে উদ্যোগের জন্য লোন গ্রহণ করতে চাচ্ছেন সে বিষয়ের উপর ট্রেনিং প্রাপ্ত হতে হবে অন্যতায় লোন পাওয়া যাবে না।
  • আবেদন কারীর বয়স ১৮ থেকে ৩৪ বছর হতে হবে।
  • প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য যোগ্যতা থাকতে হবে।
  • আপনার যদি অন্য কোন ব্যাংকে লোন থাকে সেটা পরিষদের অপারগদা থাকে তাহলে লোন সুবিধা পাবেন না।
  • একজন স্থানীয় ও গ্যারান্টারের প্রয়োজন পড়বে।

প্রধানমন্ত্রী লোন বাংলাদেশ আবেদনের কিছু কৌশল

  • প্রধানমন্ত্রী লোন বাংলাদেশ পোর্টালে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন।
  • সাক্ষরিত ডিপি এবং আপনাকে লোন পরিশোধ করার সক্ষমতায় স্বাক্ষর দিতে হবে।
  • আপনার সম্পত্তির অরজিনাল দলিল এবং গ্যারান্টারের সম্পত্তির মুলকপি দিতে হবে।
  • আবেদনকারী স্থানীয় ব্যাংকে গিয়ে ঋণ পরিশুদ্ধ সক্ষমতা প্রদান করতে হবে।
  • আবেদনকৃত সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রধানমন্ত্রী লোন বাংলাদেশ থেকে গ্রহণ করতে পারবেন।

লেখকের শেষ মন্তব্য

প্রিয় বেকার যুবক ভাই ও বোনেরা আপনারা যারা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য লোন গ্রহন করতে চাচ্ছেন কিন্তু উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জানেন না আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে খুব সহজেই জানতে পেরেছেন। আর্থাটিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকলে আশা করি শেয়ার করে দিতে কখনো ভুলবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহবুব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url