টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়ার উপায় - ভ্রমণ গাইড জেনে নিন
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ করার জন্য প্রতিটি পর্যটকের অনেক বেশি আগ্রহ থাকে। কিন্তু
অনেকেই জানেন না কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন এবং কোথায় খাবেন ইত্যাদি সম্পর্কে।
আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়ার উপায় সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।
টাঙ্গুয়ার হাওর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য হয়ে ঘেরা একটি হাওর। আর সেজন্য
বাংলাদেশের দূরদূরান্ত থেকে প্রতিটি ভ্রমন প্রিয় মানুষ বছরে একটি সময় ভ্রমণ
করতে যেতে চান।এই পোস্টের মাধ্যমে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময় খাবার,
নৌকা ভাড়া এবং দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়ার উপায় জানতে পড়ুন
- টাঙ্গুয়ার হাওর
- টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ করার উপযুক্ত সময়
- টাঙ্গাইল হাওর যাওয়ার উপায়
- সুনামগঞ্জ থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়ার উপায়
- টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে গিয়ে কোথায় থাকবেন?
- টাঙ্গুয়ার হাওরে কোথায় খাবেন?
- টাঙ্গুয়ার হাওর হাউজবোট ভাড়া
- টাঙ্গুয়ার হাওর নৌকা ভাড়া
- ভ্রমণ করার সময় যে বিষয়গুলো রাখতে পারেন
- টাঙ্গুয়ার হাওরের আশে পাশের স্থানসমূহ
টাঙ্গুয়ার হাওর
টাঙ্গুয়ার হাওরের আয়তন মূলত ৬৯১২ একর জুরে। তবে বর্ষাকালে টাঙ্গুয়ার হাওরের
আয়তন বেরে হয়ে যায় ২০,০০০ একর। এই হাওরে রয়েছ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ অর্থাৎ ১৪০
প্রজাতির মাছ। ব্যাঙ রয়েছে ১২ প্রজাতির এবং সরিসৃপ রয়েছে ১৫০ প্রজাতিরও বেশি। আর
এ সকল জীবের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য। টাঙ্গুয়ার হাওরে
শীতকালে
দেখা যায় ২৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি। আর এই পাখিগুলোর বিস্তৃতি ঘটে পুরো টাঙ্গুয়ার
হাওর জুরে। টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে আপনারা খুব সহজেই ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া,
জৈন্তার পাহাড় গুলো দেখতে পাবেন।টাঙ্গুয়ার হাওরে এসে জমেছে ভারতের মেঘলয় পাহাড়
থেকে ৩০টি ছোট বড় ঝর্ণার পানি। আর এটাই মূলত হাওরের পানির বড় একটি উৎস।
টাঙ্গুয়ার
হাওরে ওয়াচ-টাওয়ার দেখতে পাবেন আশেপাশের পানি খুব স্বচ্ছ হয় টাওয়ারের উপর থেকে
হাওরের সৌন্দর্য প্রতিটি পর্যটককে আকৃষ্ট করে থাকে। টাঙ্গুয়ার হাওরে দীপের মতো
ভাসমান ৪৬টি গ্রাম বা দ্বীপ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের টাঙ্গুয়ার হাওরকে ১৯৯৯
সালে ইকোলজিকাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া ঘোষনা করেছেন এবং টাঙ্গুয়ার হাওরটি রামসার
সাইটে ২০০০ সালে স্থান করে নেয়।
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ করার উপযুক্ত সময়
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ করার উপযুক্ত সময় কখন সে সম্পর্কে জানার জন্য প্রায়
অধিকাংশ মানুষ গুগলে অনুসন্ধান করে থাকেন। আপনাদের জানার সুবিধার্থে আজকের এই
আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়লে, আশা করি আপনাদের জন্য
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ করার জন্য কখন উপযুক্ত সময় হতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নিতে
পারেন।
টাঙ্গুয়ার হাওড়া ভ্রমণ করার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। কেননা
বর্ষাকাল ব্যতীত হাওরে অন্যান্য সময়ে পানির পরিমাণ অনেকটাই কম থাকে। তবে শীতকালে
টাঙ্গুয়ার হাওড়ে গেলে অতিথি পাখি দেখা যায়।
টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়ার উপায়
টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানার জন্য প্রায় অধিকাংশ মানুষ
ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করে থাকেন। কিন্তু সঠিক তথ্যটি কোথাও পান না,যা আজকের এই
পোস্টটির মাধ্যমে জেনে নিতে পারবেন। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সায়দাবাদ
বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন সরাসরি সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্য মামুন এবং শ্যামলী
পরিবহনের বাস চলে যায়। এছাড়া মহাখালী থেকে এনা পরিবহনের বাস ছেড়ে যায়। আপনারা চাইলে এসব যানবাহনের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ
যেতে পারেন। তবে বাস ভাড়া হিসাবে সুনামগঞ্জ যেতে নন-এসি বাসে ৬৫০-৭৫০ টাকা বাস
ভাড়া লাগতে পারে। তবে সময়ের সাথে সাথে কম বেশি হতে পারে।
সুনামগঞ্জ থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়ার পর সেখানে নেমে সিএনজি, লেগুনা কিংবা বাইকের মাধ্যমে
সুরমা নদীর উপর নির্মিত বড় ব্রিজের কাছে গিয়ে এখান থেকে তাহিরপুরে খুব সহজেই
যাওয়া যায়। আর এই তাহিরপুর নৌকা ঘাট থেকে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী নৌকা ভাড়া করে
ঘুরে আসতে পারেন টাংগুয়ার হাওর থেকে। তবে শীতকালে পানি কমে যাওয়ার ফলে আপনাকে
লেগুনা, সিএনজি, বাইকে করে সোলেমানপুর যেতে হবে সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে ঘুরতে
পারবেন।
টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে গিয়ে কোথায় থাকবেন?
টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে গিয়ে নৌকায় রাত কাটানো ছাড়া আর কোন ব্যবস্থা নেই।
আপনারা যারা টাঙ্গুয়ার হাওরে রাত কাটাতে চাচ্ছেন নিরাপত্তার জন্য পাড়ের কাছাকাছি
থাকাটাই উচিত বলে মনে করি। এছাড়া আপনারাও যদি ঘর ভাড়া করে থাকতে চান,
সেক্ষেত্রে বিলাশ নামে কাঠের বাড়িতে টেকেরহাট এলাকায় স্বল্পমূল্যর ভিতরে রুম
ভাড়া নিয়ে থাকতে পারেন। তবে ভ্রমণ করতে গিয়ে নৌকায় কাটানো রাতের অভিজ্ঞতা
আপনার জন্য স্বরণীয় হয়ে থাকতে পারে।
টাঙ্গুয়ার হাওরে কোথায় খাবেন?
টাঙ্গুয়ার হাওরে আপনারা যদি একদিনের ভ্রমণের জন্য যেতে চান সেক্ষেত্রে সকালের
খাবার তাহিরপুর হোটেল থেকে খেয়ে রওনা দিতে পারেন। হাওর থেকে ফিরে আসার পরে
প্রায় ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছ দিয়ে অর্থাৎ পছন্দ অনুযায়ী মাছ দিয়ে খাবার সেরে
ফেলতে পারেন। এছাড়া আপনারা যদি নৌকায় রান্না করে খেতে চান, তবে তাহিরপুর থেকে
কয় দিনের জন্য
বাজার করে নিয়ে যেতে পারেন। হাওড়ের মাঝখানে ছোট ছোট যে বাজারগুলো রয়েছে সেখান
থেকে তাজা মাছ ক্রয় করতে পারেন। এছাড়াও নিতে পারেন মুরগি, দেশি হাঁস কিংবা শুটকি
মাছ। আপনাদের কাছে রান্না করা যদি ঝামেলা মনে হয়, সেক্ষেত্রে টেকের ঘাট রাত্রি
যাপন করলে সেখানে খাবার খেয়ে নিতে পারেন।
টাঙ্গুয়ার হাওর হাউজবোট ভাড়া
টাঙ্গুয়ার হাওরে বর্তমানে নানান ধরনের হাউজবোট, সেমি হাউজবোর্ড এবং বিভিন্ন
ধরনের নৌকা পাওয়া যায় রাত কাটানোর জন্য। প্যাকেজ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের হাউজবোটের
ভাড়া একেক রকম হয়ে থাকে। টাঙ্গুয়ার হাওড়ে এক রাত থাকা, সব বেলার খাবার এবং
আশেপাশের সকল স্পটগুলো ঘুরে দেখার প্যাকেজ প্রিমিয়াম বোটগুলোর ক্ষেত্রে ৬ হাজার
থেকে
১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া মোটামুটি প্রিমিয়াম যে প্যাকেজগুলো
রয়েছে সেগুলোতে ৪,৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে প্যাকেজে হাউজবোট
গুলোর সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত থাকে। ভাড়া করার পূর্বে অবশ্যই প্যাকেজ দেখে নিতে
পারেন এবং প্রয়োজনে দরদাম করে নেওয়া উচিত। তবে ডে ডে ট্রিপ হলে খরচের পরিমাণ
অনেক কম হবে।
টাঙ্গুয়ার হাওর নৌকা ভাড়া
টাঙ্গুয়ার হাওরের নৌকা ভাড়া মূলত তিনটি বিষয়ের উপরে নির্ভর করে থাকে। আর এগুলোর
মধ্যে হচ্ছে নৌকার ধারণক্ষমতা, সুবিধা কি কি রয়েছে, কি কি ঘুরে দেখতে পারবেন রাতে
থাকবেন নাকি এবং সিজন ইত্যাদির উপরে। সাধারণত ছোট নৌকার ভাড়া ২৫০০ থেকে ৩ হাজার
টাকায় এবং মাঝারি নৌকার ভাড়া ৩৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা এবং বড় নৌকা
৫০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা ভাড়া করতে পারবেন। তবে এক রাত নৌকায় থাকতে চাইলে ভাড়াে
পরিমাণটা বাড়বে। আপনারা যদি রান্না করে খেতে চান খেতে চান সেক্ষেত্রে মাঝিকে
খরচের টাকা দিলে বাবুর্চি নিয়ে যাবে এবং নিজেই রান্নার ব্যবস্থা করে দিবে। কি কি
করবেন সেগুলো অবশ্যই মাঝির সাথে আলোচনা করে দরদাম ঠিক করে নেওয়া উচিত।
এছাড়াও
আপনারা যদি খরচ কমাতে চান সেক্ষেত্রে লোকাল বডির নৌকা গুলো ভাড়া করতে পারেন। তবে
যে বিষয়গুলো আপনাদের লক্ষ্য রাখা উচিত সেগুলো হচ্ছে নৌকায় বাথরুম রয়েছে কিনা,
বিদ্যুৎ, ফ্যানের ব্যবস্থা আছে কিনা সেগুলো সম্পর্কে। আশা করি খুব সহজেই বুঝতে
পেরেছেন।
ভ্রমণ করার সময় যে বিষয়গুলো রাখতে পারেন
- পাওয়ার ব্যাংক
- রেইনকোট
- টয়লেট পেপার
- ছাতা
- ওষুধ পত্র
- স্যান্ডেল
- সানগ্লাসকে
- গামছা
- টর্চ লাইট
- খাবার পানি
- শুকনো খাবার
- জামা কাপর ইত্যাদি
টাঙ্গুয়ার হাওরের আশে পাশের স্থানসমূহ
- নীলাদ্রি লেক
- শিমুল বাগান
- বিছানাকান্দি
- জাফলং
- লালা খান
- ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর
লেখকের শেষ মন্তব্য
ভ্রমণ প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমেই আপনারা খুব সহজেই জেনে
নিতে পারলেন যে, টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়ার উপায় এবং যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়গুলো
সম্পর্কে। আশা করি আপনারা যারা ভ্রমণ করতে চাচ্ছেন আজকের এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত
হতে পেরেছেন। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত সেটা হচ্ছে ভ্রমণের সময় অবশ্যই
পরিবেশ নষ্ট করার উচিত নয়। ভ্রমণ সম্পর্কিত তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো
করতে পারেন।
মাহবুব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url