বাংলাদেশে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার নিয়ম ২০২৫

বাংলাদেশে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায় শুরু করতে চাচ্ছেন কিন্তু কিভাবে করবেন বুঝতে পারছেন না? তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে নিচে জেনে নিতে পারেন। তাহলে বাংলাদেশে মানি এক্সচেঞ্জ করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন।
মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা বর্তমানে আপনার জন্য লাভজনক একটি ব্যবসায়িক ক্ষেত্র হতে পারে। বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের মানুষ লেনদেন করে থাকেন। আপনারা যারা ব্যাবসাটি করতে চাচ্ছেন এই পোস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার নিয়ম জেনে নিতে পারেন।

পোস্ট সূচীপত্রঃ মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার নিয়ম জানতে পড়ুন

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা কি জানুন

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা কি সেই সম্পর্কে প্রায় অধিকাংশ মানুষ জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন। যা আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে খুব সহজেই জেনে নিতে পারবেন। মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসাটি হচ্ছে মূলত বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করার একটি অর্থনৈতিক কার্যক্রম প্রক্রিয়া। আরো সহজ করে যদি বলা যায় তাহলে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এক দেশের মুদ্রা 

বিশ্বের অন্য অন্য দেশগুলোর সাথে মুদ্রার বিনিময় করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ যদি বলা যায়, কাতার কিংবা সৌদি আরবের রিয়াল বাংলাদেশে নিয়ে আসে সেক্ষেত্রে পরবর্তী সেই টাকা বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করতে চাইলে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তার টাকা ডলারের পরিবর্তন করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থ লেনদেন থেকেই শুরু করে 

বিদেশে ভ্রমণের সময় একেক দেশের মুদ্রা একেক রকম মুদ্রায় রূপান্তর করতে হয় সেক্ষেত্রে এই ব্যবসার গুরুত্বটা বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত মুদ্রার বিনিময় হার অনুযায়ী এ সকল প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত অর্থ লেনদেন করে থাকেন।বাংলাদেশের প্রায় ২৩৫টি মানি এক্সচেঞ্জ বৈধ প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং প্রায় ১ হাজারের বেশি আবেদন প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার নিয়ম জানুন

বাংলাদেশে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করা আপনাদের জন্য বাধ্যতামূলক এবং ব্যবসার নীতিমালাগুলো অনুসরণ করাতে হবে। কেননা এই ব্যবসাটি হচ্ছে আন্তজার্তিক মুদ্রার লেনদেন এবং মুদ্রার বিনিময় একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক কার্যক্রম প্রক্রিয়া। তাই বাংলাদেশের মানি এক্সচেঞ্চ ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী এবং পরিচালনা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। আপনাদের জানার সুবিধার্থে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যে শর্তগুলো রয়েছে সেগুলো আলোচনা করা হচ্ছে।

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার লাইসেন্স করা

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আপনাদেরকে সরাসরি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। কেননা মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার ক্ষেত্রে লাইসেন্স ছাড়া মানি এক্সচেঞ্জ কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্পূর্ণভাবে আইনত অপরাধ হিসাবে গন্য। এখন আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন লাইসেন্স মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করতে কি কি যোগ্যতা গুলো লাগে সেগুলো আপনাকে জানার জন্য নিচে উল্লেখ করে দেওয়া হচ্ছে।

  • আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
  • মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে প্রাথমিক মূলধন কমপক্ষে ৫০ লক্ষ টাকা হতে হবে।
  • মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কোম্পানির নামের সাথে Exchange, Forex,Remittance, Money tranfer ইত্যাদি শব্দগুলো অবশ্যই যোগ করতে হবে।

আপনার ব্যবসার প্রাথমিক মূলধন বেশি রাখা

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার ক্ষেত্রে মুদ্রা বিনিময়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাথমিক সর্বনিম্ন টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসার। ব্যবসার শুরুতেই প্রাথমিকভাবে আপনাকে অন্তত ৫০ লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। এটার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এটি লেনদেনের ব্যবসা হওয়াতে প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট অর্থনীতি স্থির রাখতে এবং সংকট যেন না পরে সেদিকে লক্ষ্য রেখে মূলত এটি নির্ধারণ করা হয়েছে।

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায় খেক্ষে লেনদেন পরিচালনা করার জন্য একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনারা বাংলাদেশের যে কোন ব্যাংক থেকে একাউন্ট খুললেই আপনারা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকগুলোতে একাউন্ট করলে আপনার জন্য ভালো হতে পারে।

ব্যবসা শুরুর জন্য বোর্ড রেজুলেশন কপি সংগ্রহ করতে হবে

উপরে উল্লেখিত কার্যক্রম গুলো সম্পন্ন হওয়ার পর ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পূনরায় অনুমতি নিতে হবে। কেননা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি না দিলে আপনার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম গুলো শুরু করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো, লাইসেন্স, প্রতিষ্ঠান তথ্য ইত্যাদি দিয়ে ব্যবসা শুরু করি আবেদন করতে পারবেন। পরবর্তীতে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা শুরু করার জন্য বোর্ড রেজুলেশন কপি বা অনুমোদন পত্র গুলো সহজেই সংগ্রহ করতে পারবেন।

প্রতিষ্ঠানের জন্য স্থায়ী অফিস এবং কার্যক্রম পরিচালনা

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্স প্রাপ্ত মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট একটি স্থানে স্থাপন করতে হবে। তবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস বা রেকর্ড এবং কাগজপত্র সংগ্রহে রাখতে হবে। যেন বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোন সময়ে ডকুমেন্টস গুলো পরিদর্শন পারে।

ব্যবসার লাইসেন্স নবায়ন করা

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা সাধারণত নির্দিষ্ট একটি মেয়াদের উপরে ভিত্তি করে দেওয়া হয়ে থাকে। আর সেজন্য  আপনাদের মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলে পুনরায় নবায়ন করে ব্যবসা পরিচালনা করা উচিত। আপনার মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার লাইসেন্স নবায়ন করার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের অর্থনীনৈতিক স্থিতি এবং পূর্বের লেনদেনের প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে জমা দিতে হবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্ধারিত ফু পরিশোধ করে লাইসেন্স খুব সহজেই নবায়ন করতে পারবেন।

মানি এক্সচেঞ্জ করতে যা যা লাগে?

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্টস বা কাগজপত্রগুলো প্রয়োজন পড়বে। কি কি কাগজপত্রগুলো প্রয়োজন পড়বে আপনারা যারা ধারণা রাখেন না আপনাদের জানার সুবিধার্থে নিচে উল্লেখ করে দেওয়া হচ্ছে।

  • আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন সনদ লাগবে।
  • বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করা লাইসেন্স লাগবে।
  • বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করার জন্য আবেদনকারী পাসপোর্ট ও ভিসার কপি লাগবে।
  • ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট লাগবে।
  • আতিক সচলতার প্রমাণপত্র গুলো লাগবে
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট লাগবে
  • বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যবসায় শুরু করার জন্য অনুমোদন পত্র প্রয়োজন পড়বে।
  • প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য তথ্য এবং চুক্তিপত্র ও প্রয়োজন পড়বে।
  • মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য KYC ও AML নীতিমালা কপি প্রয়োজন পড়বে।

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার সুবিধাগুলো জানুন

অন্যান্য ব্যবসাগুলোর তুলনায় মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা থেকে অধিক বেশি পরিমাণ টাকা উপার্জন করা সম্ভব হয়। কেননা আন্তর্জাতিকে মুদ্রা বিনিময় হার প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে বলে সঠিক সময়ে ক্রয় বিক্রয় করতে পারলে লাভবান হওয়া যেতে পারে।

  • মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা সবসময়ই চাহিদা সম্পূর্ণ একটি ব্যবসা, কারণ ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীদের বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয়ে থাকে।
  • মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা নগদ হওয়ার ফলে খুব সহজেই আথিকভাবে সচল হওয়া যায়।
  • মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসাতে ঝুঁকির সম্ভাবনা খুবই কম থাকে যদি সঠিক নিয়মকানুন অনুসরণ করতে পারেন।
  • বড় বড় যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয় এর ফলে অনেকেরই কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।
  • মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসাতে অন্যান্য ব্যবসার মতো পণ্য ক্রয় মালামাল পরিবহন ইত্যাদি ঝামেলা গুলো থাকে না।
  • আপনাদের চাইলে ঘরে বসেই এই ব্যবসাটি করতে পারেন যা বাড়তি সুযোগও এনে দিতে পারে।

মানি এক্সচেঞ্জ কোথায় কোথায় করা যায়?

আপনারা অনেকেই রয়েছেন যারা মানি এক্সচেঞ্জ কোথায় করা যায় সে সম্পর্কে জানার আগ্রা প্রকাশ করেন। তবে মানি এক্সচেঞ্জ করার ক্ষেত্রে চিন্তার কোন কারণ নেই কেননা আমরা ভাই আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করুন মানি এক্সচেঞ্জ কোথায় কোথায় করা যায় সে সম্পর্কে। আপনাদের জানার জন্য চলুন তাহলে দেরি না করে সচেতনতা লক্ষ্যে অনুমোদিত মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের হালদারের তালিকা গুলো নিচে জেনে নেওয়া যাক।

  • স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেস
  • প্লাসিড এক্সপ্রেস
  • ইনস্ট্যান্ট ক্যাশ
  • প্রভু মানি ট্রান্সফার
  • ন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ
  • এ এইচ মানি চেঞ্জার
  • আগ্রাবাদ মানি এক্সচেঞ্জ
  • আহমেদ এক্সচেঞ্জ হাউস
  • লারি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি
  • আল-আমিন মানি এক্সচেঞ্জ
  • আলা-ঈমান মানি এক্সচেঞ্জ
  • হাবিব এক্সচেঞ্জ কোম্পানি
  • চেঞ্জ এক্সচেঞ্জ কোং বাহারাইন
  • ট্রান্সফাস্ট রেমিটেন্স এলএলসি
  • ওইটার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফার

লেখকের শেষ মন্তব্য

প্রিয় ব্যবসায়িক ভাই ও বোনেরা আপনারা যারা মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করতে চাচ্ছেন আজকের এই পোস্টটির মাধ্যমে খুব সহজেই জেনে নিতে পারলেন যে, মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা কি এবং বাংলাদেশে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে। এ ধরনের আরও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহবুব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url